স্বদেশ ডেস্ক:
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত প্রতিটি দলই চারটি করে ম্যাচ খেলেছে। সবগুলো ম্যাচে জয় পেয়েছে দু’টি দল- গতবারের রানার আপ নিউজিল্যান্ড এবং স্বাগতিক ভারত।
এই দুই দলই আজ মুখোমুখি হচ্ছে হিমাচল প্রদেশের শহর ধর্মশালার নয়নাভিরাম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে না গেলে আজ যেকোনো একটি দল পিছিয়ে যাবে। এতে বাকিদের অবস্থানে কোনো ওলটপালট হবে না।
কারণ তৃতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকা চার ম্যাচে তিনটি জয় পেয়েছে এবং নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে গেছে।
চতুর্থ ও পঞ্চম দল অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান চার ম্যাচে দু’টি করে জয় পেয়েছে।
রান রেটে এগিয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়া চার নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য তৃতীয় রাউন্ডের পরেও পয়েন্ট তালিকার চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন।
তিন ম্যাচে দুই হার নিয়ে দলটি ১০ নম্বরে অবস্থান করছিল ১০ দলের মধ্যে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় নিয়ে পয়েন্ট এবং রান রেট মিলিয়ে এখন চার নম্বরে আছে অজিরা। ছয় নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনো পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার মতো ক্রিকেট খেলতে পারেনি। যেমন এবারের বিশ্বকাপে তিনটি দলের কোনো সেঞ্চুরি নেই – নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে নিচের দিকে অবস্থান করছে। মিডল অর্ডার একেবারেই পারফর্ম করতে পারছে না।
সেই সাথে যোগ হয়েছে সাকিব আল হাসানের চোট এবং তাসকিনের ইনজুরির খবর।
তবু বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারত- তিন কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে ফেলেছে।
গত রাতে ইংল্যান্ডের হারের কারণে বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকায় এমন একটা স্থানে উঠে এসেছে, যেখান থেকে দলটার নিজেদের কাজটুকু করলে সেমিফাইনালে ওঠার একটা ভালো সম্ভাবনা থাকবে।
এবং সেই ‘নিজেদের কাজ’টা হলো- ম্যাচ জয়লাভ করা।
টুর্নামেন্টের অন্তিম ম্যাচগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে কঠিন তিনটি দল – দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়া।
এর বাইরে নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ম্যাচ রয়েছে।
চার ম্যাচ শেষে পয়েন্ট টেবিলের যে অবস্থান সেখান থেকে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি, এটুকু স্পষ্ট।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে ধরনের ব্যাটিং ও বোলিং প্রদর্শনী দেখাচ্ছে এই বিশ্বকাপে, তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে জয় পাওয়া বেশ কঠিনই হবে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া নিজের ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘টপ থ্রি এখন যারা আছেন তাদের কেউ যদি শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল খেলতে না পারে, তবে অবাকই হবো। চার নম্বর জায়গার জন্য লড়াই করবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান।’
ইংল্যান্ডের এমন বাজে অবস্থা কেন?
ইংল্যান্ড এখন পয়েন্ট তালিকার নয় নম্বরে। এ পর্যন্ত দলটি চার ম্যাচে একটিতে জয় পেয়েছে, হেরেছে আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের এই তিন হারের পেছনে নানা রকম কারণের কথা বলা হচ্ছে। তবে অধিনায়ক জস বাটলার স্বীকার করে নিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়া ঠিক হয়নি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষেও দিল্লির মাঠে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের টপ ফোরে ওঠার সম্ভাবনা এখন খুবই কম।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল একটা সোনালী সময় কাটিয়েছিল, ক্রিকেট সমর্থকদের জন্য আগ্রাসী ক্রিকেটের প্রদর্শনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল- সেই ইংল্যান্ড মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটে-বলে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে।
ইংল্যান্ডের বোলাররা এখনো পর্যন্ত খুবই সাদামাটা পারফরম্যান্স করেছেন, যেমন মার্ক উড গত রাতে ৭ ওভারে রান দিয়েছেন ৭৬।
ক্রিস ওকস আগের তিন ম্যাচে মাঝারি মানের পারফরম্যান্স করে দল থেকেই বাদ পড়েছেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে স্যাম কারান, লিয়াম লিভিংস্টোনকে খেলাননি ম্যানেজমেন্ট।
এদিকে মইন আলীও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর আর খেলেননি। অর্থাৎ মাঠের পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে একাদশ নির্বাচন- সবখানেই হিমশিম খাচ্ছে ইংল্যান্ডের দলটা।
ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে নিজের ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ইংল্যান্ড মঈন, ওকস, লিয়াম এবং স্যাম কুরান- সব অলরাউন্ডারকেই একাদশের বাইরে রাখল। ডেভিড উইলিই একমাত্র অলরাউন্ডার।’
জনি বেয়ারস্টোর সাথে জেসন রয়ের জুটি যতটা ভয়ঙ্কর লাগতো, ডাউইড মালানের সাথে ততটা লাগছে না। হ্যারি ব্রুককে জায়গা করে দিতে জেসন রয়কে ভারতে আনেনি ইংল্যান্ড।
মালান এখনো পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন চলতি বিশ্বকাপে।
কিন্তু এই ধরনের ম্যাচে যেখানে ৩৫০-৪০০ রান করতেই হবে রান তাড়া করে, সেক্ষেত্রে মালান কতোটা মানানসই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট লেখক জ্যারোড কিম্বার।
ইংল্যান্ডের এই দলটা পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য সুপরিচিত ছিল। কিন্তু ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদের লেখায় উঠে এসেছে, এবারের বিশ্বকাপে ছক্কা মারার রেশিওর দিক থেকে ইংল্যান্ড নিচের দিক থেকে তিন নম্বরে আছে।
ইংল্যান্ড প্রতি ৬০ বলে একটি ছক্কা হাঁকিয়েছে, নেদারল্যান্ডস প্রতি ৭০ বলে একটি এবং পাকিস্তান প্রতি ৭৪ বলে হাঁকিয়েছে একটি ছক্কা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের এই হারের চেয়েও হারের ধরন নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে, ২২৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড।
ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে লিখেছেন, ‘শুধু পয়েন্ট না, ইংল্যান্ড নেটরানরেটেও অনেক পিছয়ে গেল। এখান থেকে ইংল্যান্ডকে সব ম্যাচে জিততে হবে। বাটলার ও ব্রুককে শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে।’
হারশা ভোগলের মতে, ইংল্যান্ডের জন্য লম্বা ২০টা দিন অপেক্ষা করছে।
এর মধ্যে ইংল্যান্ডের বাহাতি পেসার রিস টপলি চোট পেয়েছেন, ক্রিস ওকস পারফর্ম করছেন না, মার্ক উডের বলে সহজেই রান নেয়া যাচ্ছে এবং ব্যাটিং ধস তো আছেই।
নিউজিল্যান্ড বনাম ভারত
এর আগে ১৯৯২ সাল থেকে ২০২৩ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ভারত নিউজিল্যান্ডকে মাত্র একটি ম্যাচে হারাতে পেরেছে।
বিশেষ করে ভারতের চারটি হারের স্মৃতি এই দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারের জন্যই সাম্প্রতিক অতীত।
২০২১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, একই বছরের দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির গ্রুপ পর্বের ম্যাচ, ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টারে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ২০১৬ সালে নাগপুরে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির গ্রুপ পর্বের ম্যাচ।
এখনো পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড এবং ভারত চলতি টুর্নামেন্টে অপরাজিত, তেমন কোনো খুঁত পাওয়া যায়নি এই দুই দলের পারফরম্যান্সে।
যদিও ভারত হার্দিক পান্ডিয়াকে মিস করবে আজ, তবে মোহাম্মদ শামি দলে জায়গা করে নিলে বোলিংটা শক্তিশালী হবে দলের।
নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন ভালো ছন্দে আছেন, সাথে বিশ্বকাপের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারী বোলার মিচেল স্যান্টনার তো আছেনই।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা ট্রেন্ট বোল্টের বল কিভাবে সামলান সেটার ওপর এই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারিত হতে পারে।
রোহিত ট্রেন্ট বোল্টের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে চারবার আউট হয়েছেন।
সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত সমীকরণে আসা যাচ্ছে না – কে খেলছে ফাইনাল আর কার হাতে উঠবে শিরোপা।
আর বিভিন্ন সমীকরণের ফাঁকে বাংলাদেশের সেমিতে খেলার স্বপ্ন যেন বেঁচে আছে ভালোভাবেই।
সূত্র : বিবিসি